দ্বিগুণ ভাড়া বাড়িয়েও লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৮১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান করছে সরকারি মালিকানাধীন এ সংস্থা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাড়া বৃদ্ধিও কারণে পণ্য পরিবহন কমে গেছে। এ ছাড়া বাড়ানো হয়েছে রেলওয়ের বিভিন্ন খরচের খাত। পণ্য ও পার্সেল পরিবহনে যথাক্রমে ৮০ ও ২০০ শতাংশ বাড়ানো হয়। দ্বিগুণ ভাড়া বাড়ালেও বিভিন্ন খাতের খরচ ও অপচয় রোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও বগি রক্ষণাবেক্ষণসহ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রেলের লোকসান লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। তথ্যমতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে টিকিট বিক্রিসহ বিভিন্ন খাত থেকে রেলওয়ে আয় করে ৮৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর উক্ত অর্থবছরে ব্যয়ের পরিমাণ ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। হিসাব মতে, সব মিলে এক বছরে লোকসানের পরিমাণ ৮১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
রেলের বর্তমান-ভবিষ্যৎ
সৈয়দপুরে গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম রেলখানা। সেখানে চলছে বগি সংস্কারের কাজ। কেবল বগি সংস্কার নয়, আরও অনেক কাজই সেখানে হয়। তবে একটা সময় ছিল, যখন এই কারখানাতেই আরও অনেক বড় কাজ করা সম্ভব হতো। ট্রেনের নতুন বগিই তৈরি হতো এখানে। ১৯৯২ সালের পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। সৈয়দপুরের মতোই এখন জরাজীর্ণ অবস্থা চট্টগ্রামের রেল কারখানাটিরও। কেবল খুচরা কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি আর বগি মেরামত ছাড়া বলতে গেলে কিছুই হয় না এসব জায়গায়। তবে কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয়ে এখন কারখানা দুটির আধুনিকায়নের কাজ এখন চলছে।
রেল কারখানাগুলোর মতোই এখন বেহাল অবস্থা রেলের। আর তাই কেবল বগি, ইঞ্জিন কিংবা লাইন সংস্কার করলেই হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুরো রেল নিয়েই ভাবতে হবে নতুন করে। আর এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথাই বলছেন রেলের বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানির সাশ্রয়, স্বল্পমাত্রার পরিবেশদূষণ ও ভূমির পরিমিত ব্যবহার, নিরাপদ আর যানজটের সমস্যাহীন যাতায়াতব্যবস্থা হিসেবে এখনো জনপ্রিয় রেলওয়ে। একসঙ্গে বেশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা যায় বলে রেলের উপযোগিতাও অনেক বেশি। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত রেল কি পারছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে? এর উত্তর হচ্ছে, না। রেল মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে পারছে না।
প্রতিবছরই লোকসান গুনছে রেল। বছরে বছরে টাকার অঙ্কে লোকসানের পরিমাণও বাড়ছে। গত বছরই রেলের লোকসান ছিল ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
অথচ একসময় এই ভূখণ্ডেই যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম ছিল রেলপথ। বিগত সময়ের পরিসংখ্যান বিশ্লষণ করে দেখা যায়, ষাটের দশকে ৭০ শতাংশ যাত্রীই যাতায়াত করত রেলে। পণ্য পরিবহন হতো ৭৪ ভাগ। সে ক্ষেত্রে সড়কের হার ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৬ ভাগ। সেখানে এখন রেল মোট যাত্রীর ১০ ভাগ বহন করছে। পণ্য পরিবহন হচ্ছে এর চেয়ে কম। আর সড়কের দখলে এখন ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ যাত্রী। পণ্য পরিবহনও হয় ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ।
একটু পেছন ফিরলে দেখা যাবে, এই অঞ্চলে রেলপথ গড়ে ওঠার ইতিহাসটা অনেক বছরের পুরোনো। সময়টা ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ ভারতে তাদের ঔপনিবেশিক এলাকায় সামরিক তৎপরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও প্রশাসনিক কারণে রেলওয়ে পরিবহনব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ১৮৪০-এর দশক থেকে নেওয়া হয় নানা পরিকল্পনা। ১৮৫৩ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলা রেলওয়ে নামে তখনকার বোম্বের কল্যাণ থেকে থানে পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেললাইন চালুর মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতে চালু হয় রেলওয়ে পরিষেবা।
পশ্চিম বঙ্গের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলার প্রথম রেলপথ চালু হয় ১৮৫৪ সালে। আর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে রেল যোগাযোগের জন্য ঐতিহাসিক দিন ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন চালুর মাধ্যমে শুরু হয় ট্রেন চলাচল।
মূলত ব্রিটিশ ভারতের চাহিদা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের নেটওয়ার্ক, যা ছিল কলকাতা-কেন্দ্রিক। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গন্তব্য বদলে যায়। কিন্তু সে অনুযায়ী এই অঞ্চলের রেলপথের বিন্যাস করা হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বাড়েনি রেলপথ। রাজধানীর সঙ্গে কাছের সব জেলাকে যেমন রেল যোগাযোগের মধ্যে আনা যায়নি। তেমনি নদী ও সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি রেলওয়েকে।
১৯৪৭ সালে এ দেশে রেলপথ ছিল ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার। মধ্যিখানের সময়টায় পাকিস্তান পেরিয়ে বাংলাদেশ হয়েছে। ৬০ বছরে লাইন বেড়েছে মাত্র ৩৫ দশমিক শূন্য ৪ কিলোমিটার। অথচ সেখানে এই সময় সড়ক পথ ৬০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০ হাজার কিলোমিটার। দেশের ২০টি জেলা এখনো রেল নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে।
স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে দেশে রেলস্টেশন ছিল ৪৬৬টি। এখন তা নেমে এসেছে ৪৪০-এ। এগুলোর মধ্যে আবার লোকবলের অভাবসহ নানা সমস্যায় বন্ধ রাখা হয়েছে ১৬০টি স্টেশন। যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগনের সংখ্যাও গত ৪০ বছরে না বেড়ে বরং কমেছে। লোকোমোটিভ ইঞ্জিনের সংখ্যাও কমে হয়েছে ২৯৫টি। এসব ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক জীবন ধরা হয় ২০ বছর। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমোটিভ ইঞ্জিনগুলোর ২২৩টির অর্থনৈতিক জীবন পেরিয়ে গেছে, যা মোট ইঞ্জিনের ৭০ ভাগের বেশি। এর মধ্যে ১০৩টির বয়স ৪০-এর বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে, গড়ে অন্তত ৭৫টি ইঞ্জিন মেরামতের জন্য কারখানা থাকে। বাকিগুলোর মধ্যে ৩০-৩৫টি ব্যবহার হয় দুর্ঘটনায় পড়া ট্রেন উদ্ধার ও নানা উন্নয়নকাজে। সব মিলিয়ে রেলের গন্তব্য, রোলিং স্টক, স্টেশন ও জনবলের সংখ্যা কমছেই।
খাদ্য ও জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্য সারা দেশে পরিবহনের জন্য রেলওয়ে সত্তরের দশকে গুরুত্বপূর্ণ সব গুদামের সঙ্গে রেল সংযোগ গড়ে তোলে। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে এখন এ রকম ৫২টি লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ৩৮টি লাইনে চলে মাঝেমধ্যে।
অথচ এক হিসাবে দেখা গেছে, রেলওয়ে ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ ঠিকমতো চালু করা গেলে কেবল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই অন্তত ৫০০ পণ্যবাহী ট্রাক কম চলবে। ফলে সড়কের ওপর যেমন চাপ কমবে, তেমনি ব্যবসার সময় ও ব্যয়ও কমবে।
মানুষ বেড়েছে, রেলের প্রতি প্রত্যাশা বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সে অনুযায়ী রেল নিয়ে ভাবা হয়নি। বাড়েনি রেলের জন্য দরকারি বরাদ্দ। দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পরিবহনব্যবস্থার ২৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল রেলের জন্য। পরে একসময় এই বরাদ্দই নেমে যায় ১৪ শতাংশে। অবশ্য ২০০৮-০৯ সালের দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী রেলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৬ শতাংশ। সেখানে সড়কপথের জন্য ৬৫ শতাংশ। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্যও রেলকে পিছিয়ে রেখেছে।
পদ্মা নদীর অবস্থানের ভিত্তিতে এ দেশে রেলপথকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পশ্চিম দিকে আছে ব্রডগেজ। এর মাঝখানের দূরত্ব ১ মিটারের বেশি। আর পূর্বের মিটারগেজের রেললাইনের মাঝের দূরত্ব ১ মিটার। তবে এর বাইরেও ডুয়েলগেজ চালু আছে। একসময় ন্যারোগেজের চলন থাকলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে।
রেলওয়েতে লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। এর মধ্যেও ২০১০ সালের ৪ মার্চ মোবাইলে টিকিট কাটার সুবিধা চালু হলে টিকিট বিক্রিতে এখনো কমেনি কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। যে কারণে কমেনি মানুষের ভোগান্তিও।
কেবল তা-ই নয়, যাত্রীসেবা ও ট্রেনের নিরাপত্তা কমছে প্রতিনিয়তই। অপরিচ্ছন্ন স্টেশন আর ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগেরও শেষ নেই।
এভাবেই প্রতিদিন চলাচলকারী ট্রেনের অর্ধেকই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। কেবল তা-ই নয়, সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ৩০০ ট্রেনের যাত্রা বাতিলের ঘটনা ঘটছে। তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও উঠছে চরমে।
গারা দেশে আন্তনগর, মেইল, লোকাল ও মালগাড়ি মিলিয়ে ট্রেন চলাচল করে প্রায় ৩১০টি। ইঞ্জিন আর লোকবলের অভাবে অনেক সময়ই এসব ঠিকমতো চলাচল করছে না। সারা দেশে ট্রেনের সিঙ্গেল লাইনও এ ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।
১৯৮৫ সালে রেলওয়ের জনবল নিয়োগ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে রেলওয়ের লোকসান কমানো ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবির) পরামর্শে লোক কমানো শুরু হয়। পাশাপাশি লোক নিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিছু মামলা। এসব কিছুর প্রভাব পড়ে রেলের ওপর। রেলের ৪০ হাজার ২৬৪ পদের মধ্যে এখন শূন্য রয়েছে ১৬ হাজার ৩৭৪টি। যেখানে এখনকার অবস্থাতেই স্টেশনমাস্টার দরকার ১ হাজার ১৪৪টি। সেখানে কাজ করছে মাত্র ৭১৬ জন। বিভিন্ন পদে এরই মধ্যে কিছু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সংখ্যায় তা খুবই সামান্য।
যাত্রীসেবার মান প্রতিনিয়ত কমলেও বরাবরই রেলওয়েকে বলা হয়েছে সেবাখাত। আর এ কথা বলেই ১৯৯২ সালের পর আর রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। অথচ জ্বালানি থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ সব ক্ষেত্রেই ব্যয় বেড়েছে অনেক।
রাজনৈতিক কারণে প্রায়ই বাধার মুখে পড়ে ট্রেন চলাচল। আর এ জন্য রেলকে সহিংসতার আগুনে পুড়তে হয়েছেÑএমন উদাহরণ কম নেই। যে কারণে অনেক সময়ই ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেললাইন পর্যন্ত।
জনবলের সংকট তো রয়েছেই। তার ওপর রেল পরিচালনায় অদক্ষতাকেও বড় করে দেখা হয় এর পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে। আছে অনিয়মের অভিযোগ। রেলের যেসব জমি দখল হয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে রেলের একশ্রেণীর কর্মচারী জড়িত বলেও বলা হয়।
রেলের হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির ৪ হাজার ৬৩৫ দশমিক ৫১ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরাও। রেলের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৬০৫ একর। এর মধ্যে রেল পরিচালনার কাজে ব্যবহার হচ্ছে ৩০ হাজার ৫১৪ একর। ইজারা হিসেবে লাইসেন্স করা জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৩ একর। এর বাইরে বাকি জমি অবৈধ দখলে রয়েছে।
রেলওয়েকে লাভজনক করতে হবে। এ কথা বলে বিভিন্ন দাতা সংস্থা বিভিন্ন সময় নানা উপদেশ আর চাপ দিয়ে রেলওয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে বারবার পরিবর্তন এনেছে। রেলওয়ে বোর্ড তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীকে তিনবার চেয়ারম্যান ও তিনবার মহাব্যবস্থাপক করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ’ গঠন করে যোগাযোগমন্ত্রীকে এর চেয়ারম্যান করা হয়। এটিও এখন কার্যকর নয়। অথচ গত ৬০ বছরে ভারতীয় রেলওয়ের কাঠামোর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
এর মধ্যেও পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, রেলের যাত্রী ও আয় দুটিই বাড়ছে। ২০০৮ রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন করেছে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার। ২০১০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় আট কোটিতে। আয়ও বছর বছর বাড়ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, রেলের জনপ্রিয়তার কোনো কমতি নেই। আর তাই আবারও আলোচনায় কীভাবে রেলকে আবার পণ্য ও গণপরিবহনের অন্যতম একটি মাধ্যম করে তোলা যায়।
রেলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কথাই বলছে বর্তমান সরকার। গত ৪ ডিসেম্বর আবারও গঠন করা হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে রেলওয়েকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন প্রত্যাশা। এর পর থেকেই রেলকে ঘিরে নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে।
সরকার বর্তমানে ১৬ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের জন্য ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ খাতের উন্নয়নে পরিকল্পনা কমিশনের পরিবহন সমন্বয় উইংয়ের অধীনে তৈরি ২০ বছরমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আসছে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় মোট ১ হাজার ১০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন তৈরির কথা। সেই সঙ্গে ২০০ কিলোমিটার বন্ধ সেকশন প্রাণ পাবে, এমন কথাও বলা রয়েছে।
নতুন করে আরও দশ জেলায় রেল তার সেবা বাড়াতে যাচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে: কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নড়াইল, বরিশাল, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, রাঙামাটি ও বান্দরবান। এ ছাড়া কক্সবাজার, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে রেলওয়ের সংযোগ দেওয়ার কথা বলছে সরকার। যমুনা নদীর ওপর দেওয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগ দেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলকে আদর্শ গণপরিবহনে রূপ দিতে কাজ করতে হবে। পণ্য পরিবহনে রেলকে প্রাধান্য দিতে হবে। যানজট দূর করতে রাজধানীর সঙ্গে পাশের জেলাগুলোর মধ্যে কমিউটার ট্রেন-সেবা চালু করা দরকার।
প্রতিবেশী দেশগুলোকে ট্রানজিট দেওয়া কিংবা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়েকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস নামে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। তবে সরাসরি চলছে না, কোনো পণ্যবাহী ট্রেন।
ভারতের করিমগঞ্জ স্টেশন থেকে মহিশাসন পর্যন্ত রেলপথ থাকলেও পথ নেই বাংলাদেশের সিলেটের কুলাউড়া স্টেশন থেকে শাহবাজপুর সীমান্ত পর্যন্ত। ভারতকে রেল ট্রানজিট দিতে হলে ঠিক করতে হবে এই ৩৯ কিলোমিটার পথ। এ ছাড়া স্থাপন করতে হবে আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রেলপথ। খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, ভৈরব ও তিতাসের ওপর নতুন দুটি রেল সেতু তৈরি করার কথা ভারতের দেওয়া ১ বিলিয়ন ঋণ সাহায্যের টাকার মধ্য থেকে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে ভারত, নেপাল ও ভুটানকে রেলযোগে মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুবিধা দেওয়ার কথা। রহনপুর-সিংহাবাদ ব্রডগেজ রেলওয়ে রুট নেপাল ট্রানজিট ট্রাফিকের জন্য ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া রাধিকপুর-বিরল মিটার গেজ রেললাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে ভুটানের সঙ্গে।
এশীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এ জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত প্রায় ১২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণের জন্য এডিবি ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ের করিডরকে ডাবল লাইন করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির অর্থায়নে টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ৬৪ কিলোমিটার পথ নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে চিনকী আস্তান-লাকসাম সেকশনে ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন করা হবে।
শেয়ার করুনঃ