সময় বিচিত্রা

ত্যাগের মহান বাণী নিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের দোরগোড়ায়। ১৬ অক্টোবর পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার প্রধান অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অপার মহিমায় হজরত ইসমাইলের পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়েছিল। সেই থেকে সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য প্রতিবছর পশু কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করে তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের আশা করেন।
কোরবানির প্রধান শিক্ষা ত্যাগ। ত্যাগ ছাড়া মনুষ্যত্ব বিকশিত হতে পারে না। বর্তমান সমাজে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, পরার্থ ও পরসম্পদ অপহরণ-দখল, তথা অনৈতিক কাজের যে প্রবণতা লক্ষ করা যায়, তার প্রধান কারণ ত্যাগের শিক্ষা না থাকা। কোরবানি আমাদের সে শিক্ষা দেয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। আজ আমরা যারা মুসলমান, তাদের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সব ধরনের লোভ, ক্রোধ, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতাকে কোরবানি করা। ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে আমরা যদি মানবকল্যাণে আত্মোৎসর্গ করতে পারি, তাহলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হব। আত্মস্বার্থ বিসর্জন না দিয়ে শুধু পশু জবাই করলে কোরবানি আদায় হবে না। এ জন্য প্রয়োজন আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে কোরবানি করা। আত্মশুদ্ধি আমাদের পরিশীলিত মানুষে পরিণত করতে পারে। প্রত্যেক মানুষ যদি ইসলামের হুকুম-আহকাম ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে সমাজ হয়ে উঠবে শোষণ-বঞ্চনাহীন, শান্তিময়। ইসলামের মূল নীতিও সেটাই।
কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পশুর হাট বসতে শুরু করেছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর যে বিষয়টি ঘটে তা হলো, পথে পথে পশু বহনকারী ট্রাকে-ট্রলারে চাঁদাবাজি। পুলিশের একটি অংশ এবং স্থানীয় একশ্রেণীর গুন্ডা-মস্তান এ অপকর্মের সাথে জড়িত। প্রতিবছর সংবাদপত্রে এ অপরাধের খবর প্রকাশিত হয়, হইচই হয়। কিন্তু ফলাফল শূন্য। অবস্থা থাকে তথৈবচ। এবারও একই ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, প্রশাসন কি এই অপরাধ বন্ধ করতে পারে না?
পাশাপাশি আছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের খবর। এ বিষয়টি প্রতিবছর এত বেশি আলোচিত হয় যে এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলাটা যেন বাহুল্য। সেই পুরোনো চিত্র। যাত্রীদের ‘ঈদযাত্রা’ নির্বিঘ্নেকরতে সরকারের ব্যাপক পদক্ষেপের ঢাকঢোল পেটানোর খবর আর যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের খবর পাশাপাশি স্থান পায় সংবাদমাধ্যমে।
তার পরও ঈদ আসছে আনন্দের বার্তা নিয়ে। সে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠবে মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য। বাংলাদেশের মানুষও সে আনন্দে শরিক হবে। ঈদুল আজহার আনন্দ-সমীরণ প্রতিটি গৃহে প্রবাহিত হোক, সবার জীবন ভরে উঠুক সুখ-শান্তিতে, আমাদের প্রত্যাশা তা-ই।
সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।